স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি - স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ
স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি সে বিষয়ে অনেকেই পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত নন। তাই স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি সেটি কম বেশি সকলেরই জেনে রাখা উচিত। দিনকে দিন আমাদের দেশে স্কিন ক্যান্সারের রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, আজ এই পোস্টটিতে আপনাদের জন্য স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি এবং স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করব।
বিভিন্ন কারণে বর্তমানে আমাদের দেশে স্কিন ক্যান্সার নামক মরণঘাতী রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। স্কিন ক্যান্সার হওয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। এমনকি স্কিন ক্যান্সারের কারণে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তবে আশার কথা এই যে স্কিন ক্যান্সারের চিকিৎসা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এই পোস্টটি পুরোটা পড়লে আপনারা স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি সেটি জানার পাশাপাশি স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ এবং স্কিন ক্যান্সার কি ভালো হয় কিনা সেসব বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানতে পারবেন। তাই এখনি পোস্টটি পড়া শুরু করুন।
পোস্ট সূচিপত্র - স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি ও স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ জেনে নিন
স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি
স্কিন ক্যান্সার হলে সাধারণত খুব সহজে তা বুঝা যায় না। স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো বুঝতে না পারার কারণে স্কিন ক্যান্সারের রোগীরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে বেশ দেরি করে ফেলে। স্কিন ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা অতি দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। তাই আপনাদের স্কিন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি সেই বিষয়টি আগে তুলে ধরছি।
আরও পড়ুন: কেন রোজ অবশ্যই বেদানা খাওয়া দরকার
- স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর চামড়ার উপরের অংশে কালো, বাদামি, গোলাপি, লাল ইত্যাদি বর্ণের দাগ দেখা যেতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাগগুলো গোল ধরনের হয়ে থাকে।
- চামড়ার উপরে দাগ সৃষ্টি হলে চুলকানির বদলে জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় অনেকে সিম্পল এলার্জি বলে মনে করতে পারেন। তাই ত্বকে জ্বালাপোড়া হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
- আপনার শরীরে যদি কোথাও আঁচিল থেকে থাকে তবে তার বর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা অথবা আঁচিল অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যাচ্ছে কিনা সে বিষয়টি লক্ষ্য করুন।
- ঠোঁটের নিচে চারিদিকে ব্রণ ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা দিলে সতর্ক হোন। কারণ এটি এনজাইম ফাংশন সংক্রান্ত ও হজমে সমস্যা জনিত সমস্যার সংকেত হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। তাই ভালোভাবে ডাক্তারের কাছে যেয়ে নিশ্চিত হন যে এটি কোনো জীবাণু সংক্রান্ত সমস্যা কিনা।
- অস্বাভাবিক হারে যদি আপনার ব্রণ বেড়ে যায়, চুল পড়তে থাকে, চামড়া শুষ্ক হয়ে যায় তবে অবশ্যই আপনি ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। যদিও এ সকল ঘটনা হরমোনের ভারসাম্য জনিত কারণে হতে পারে।
- আপনি যদি পানি কম পান করেন তবে ত্বক শোষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাবেনা। তাই পানি শূন্যতায় ভুগলে অনেক সময় স্কিন ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। আশা করি স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি তা বুঝতে পেরেছেন। এবার পোস্টের নেক্সট অংশে স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ সমূহ
আপনারা ইতোমধ্যে স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি সেটি জেনেছেন। কোনো কারণ ছাড়া এমনিতেই কোনো রোগের সৃষ্টি হয় না। ঠিক তেমনিভাবে স্কিন ক্যান্সার হওয়ার পেছনেও কিছু কারণ রয়েছে। তাই এখন আপনাদের সামনে যে বিষয়গুলো স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করবো।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি: স্কিন ক্যান্সার হওয়ার জন্য অন্যতম প্রধান কারণ হলো Ultraviolet Rays বা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে শোষিত হতে থাকলে সেটি স্কিন ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের ক্ষেত্রে শরীরে মেলানিনের পরিমাণ বেশি থাকায় তাদের স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের শরীরে মেলানিনের পরিমাণ কম থাকায় এবং তাদের সান বাথের প্রবণতা থাকায় স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকিটাও অনেক বেশী থাকে।
- আর্সেনিক: আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পানিতে অতিমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করতে থাকলে সেটি দেহ ত্বকের প্রচুর ক্ষতিসাধন করে। এমনকি এটি স্কিন ক্যান্সারের মত মরণঘাতী রোগও সৃষ্টি করতে পারে।
- সংক্রমণ: পরিবারের কোন ব্যক্তির স্কিন ক্যান্সার হয়ে থাকলে সেটি আপনার শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে। তাই স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হলো এই সংক্রমণ।
- ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যেমন: Prednisone নামক ওষুধ এর প্রভাবে স্কিন ক্যান্সার হতে পারে। যেসব লোককে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় তাদের স্কিন ক্যান্সার হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এইডস আক্রান্ত রোগী এবং যাদের দেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় তারা যদি immunosuppressant নামক ড্রাগটি সেবন করে থাকে তবে তাদেরও স্কিন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আশা করি আপনারা স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণসমূহ কি কি তা জেনে ফেললেন।
স্কিন ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রিয় বন্ধুরা আপনারা ইতোমধ্যে পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ হতে স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি এবং স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণসমূহ সম্পর্কে বিশেষ ধারণা পেয়েছেন। স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে কি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবার সেটি জেনে নেওয়ার পালা। তাই কথা না বাড়িয়ে এখন চলুন স্কিন ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম কি
- রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য এক্স-রে এর মত হাই পাওয়ারফুল এক ধরনের বিম ব্যবহার করা হয়। তাই অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও রেডিয়েশন থেরাপি এক্ষেত্রে অনেকটাই কার্যকর।
- ক্রায়োসার্জারি: ত্বকে থাকা ক্যান্সার কোষগুলিকে তরল নাইট্রোজেনের সাহায্যে প্রচন্ড ঠান্ডা করে জমিয়ে ফেলা হয়। ফলে কোনো রকম ক্ষত সৃষ্টি ছাড়াই ক্যান্সার কোষগুলোকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেওয়া যায়।
- মোহস সার্জারী: চিকিৎসার এই পদ্ধতিতে প্রতিটি স্তর থেকে ক্যান্সার কোষ অপসারণ করা হয়। একটি মাইক্রোস্কোপের নিচে স্কিন ক্যান্সারের কোষগুলো পর্যবেক্ষণ করে যতক্ষণ পর্যন্ত না সকল ক্যান্সার কোষ অপসারণ হয় ততক্ষণ তা দেখে দেখে পর্যায়ক্রমে ক্যান্সার কোষগুলো ধ্বংস করা হয়।
- কেমোথেরাপি: ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে কিছু ঔষধ সিস্টেমেটিক্যালি একটি সুঁইয়ের মাধ্যমে শিরা পথে প্রবেশ করানো হয়।
- ফটোডিনামিক থেরাপি: ক্যান্সার কোষ গুলোকে ধ্বংস করার জন্য লেজার রশ্মি ও কিছু ঔষধ ব্যবহার করে দেহের অভ্যন্তরে প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতির নাম হলো ফটোডিনামিক থেরাপি।
স্কিন ক্যান্সার কি ভালো হয়?
প্রিয় বন্ধুরা এই পোস্ট হতে আপনারা অলরেডি স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি সে সম্পর্কে জেনেছেন। একই সাথে স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ গুলো কি কি সেগুলো আপনাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে। অনেকে জিজ্ঞাসা করেন স্কিন ক্যান্সার কি ভালো হয়? তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনি যদি স্কিন ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থা থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নেন তবে অবশ্যই স্কিন ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কিন ক্যান্সার হলে রোগ ধরতে দেরি হওয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটে।
স্কিন ক্যান্সারের ঔষধ
আপনারা নিশ্চয়ই এখন স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি তা জানেন। স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। স্কিন ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট হিসাবে ডাক্তাররা Opdivo (100 Mg) ঔষধটি স্কিন ক্যান্সারের ঔষধ হিসাবে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। যেহেতু স্কিন ক্যান্সার অত্যন্ত মারাত্মক একটি রোগ তাই আপনাদের সামনে অযথাই কোনো ওষুধ সাজেস্ট করতে চাই না। আপনারা অবশ্যই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী স্কিন ক্যান্সারের ঔষধ সেবন করবেন।
উপসংহার
এই পোস্টটিতে আমরা স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি ও স্কিন ক্যান্সারের অন্যতম কারণগুলো ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি সেটি জেনে নেওয়া পূর্বক এখন আপনারা স্কিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। অতএব, পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসলে এখনই বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার করে ফেলুন। এছাড়াও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন আপডেটেড পোস্ট পেতে সবসময় আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এতক্ষণ ধরে পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। @23891
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url